মাধবকুণ্ড বাংলাদেশের অন্যতম জলপ্রপাত। মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা থানায় নয়নাভিরাম এ জলপ্রপাতের অবস্থান। জলপ্রপাত ছাড়াও উঁচু-নিচু পাহাড়, টিলা, সবুজ-শ্যামল চা বাগান, বনাঞ্চল, খাসিয়াপুঞ্জি পরিবেষ্টিত অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি মাধবকুণ্ড। প্রায় সারা বছরই দেশ-বিদেশের পর্যটকরা মাধবকুণ্ডের এ জলপ্রপাত দেখতে এখানে ভিড় করেন। শীত মৌসুমে প্রতিদিনই বনভোজনে আসা দর্শনার্থীদের পদভারে এলাকাটি মুখর হয়ে উঠে পাহাড়-জঙ্গল, উঁচু-নিচু টিলা, চা বাগানের সারি আর এর ভেতর দিয়ে আঁকা-বাঁকা, উঁচু-নিচু পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছতে হয় মাধবকুণ্ড। মাধবকুণ্ড যেতে উঁচু-নিচু পাহাড়, সবুজের গালিচায় মোড়ানো চা বাগান, আঁকা-বাঁকা সড়ক আপনাকে মুগ্ধ করবে। প্রায় দু'শ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে অবিরাম ধারায় আছড়ে পড়ছে


ঝরণার পানি। এ দৃশ্য দেখে দর্শনার্থীদের মন প্রফুল্ল হয়ে ওঠে। জলপ্রপাত এলাকায় দু'টি ‘ড্রেস চেঞ্চিং' কক্ষের সাথে দু'টি করে অত্যাধুনিক টয়লেট রয়েছে। এগুলো আপনি প্রয়োজন মত ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও এখানে রয়েছে ৫০ আসনবিশিষ্ট একটি রেস্টুরেন্ট। আপনি এ রেস্টুরেন্ট থেকে আপনার পছন্দ মত খাবার বেছে নিতে পারেন । পিকনিক পার্টির জন্যে পাহাড়ের উপরে নির্মাণ করা হয়েছে দু'টি পিকনিক সেড। নির্ধারিত ভাড়া পরিশোধসাপেক্ষে এ সেডগুলো ব্যবহার করা যাবে ।


যুগ যুগ ধরে বহমান মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত একটি আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় স্থান হিসেবে সত্তুরের দশকে দেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। বহুবছর ধরে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের একটি অন্যতম তীর্থস্থান হিসেবে এখানকার 'মাধবেশ্বর মন্দির' ও 'শিবমন্দির'-কে ঘিরে প্রতিবছর চৈত্রের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথীতে 'বারুণী স্নান'ও 'বারুণী মেলা' উপলক্ষে দূর-দূরান্ত থেকে মাধবকুণ্ডে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আগমন ঘটতো। পরবর্তী সময় ধীরে ধীরে মনোমুগ্ধকর মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের আকর্ষণে ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে এটি একটি পর্যটন ও পিকনিক স্পট হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠে এবং সারাদেশে এ জলপ্রপাতটি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে ।


মাধবকুণ্ড রেস্ট হাউজের সামনে এসে আপনাকে নেমে হেঁটে যেতে হবে মূল জলপ্রপাত এলাকায়। জলপ্রপাতের পৌঁছার আগেই ঝরনাধারা আছরে পড়ার ঝমঝম শব্দ আপনার মনে আনন্দের শিহরণ জাগাবে। চারিদিকে শুধু পাহাড় আর পাহাড় আর ঘন গাছ গাছালিতে পরিপূর্ণ । এরই মাঝে কয়েকটি মন্দির পথে পড়বে। সেই সাথে দেখতে পাবেন উপজাতীয়দের পুঞ্জি। উপজাতীদের বিচিত্র জীবনধারা ও সংস্কৃতি পর্যটকদের মুগ্ধ করবে ।


মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার ও সিলেট বন বিভাগের জুরি-২ রেঞ্জে মাধবকুণ্ড অবস্থিত। পাহাড়ি ছড়া প্রায় দু’শ ফুট উঁচু খাড়া পাহাড় থেকে সরাসরি নিচে পড়ছে । উঁচু পাহাড় 


জলপ্রপাতের ধারা নিচে নেমে এসে সৃষ্টি করেছে কৃষ্ণ। যুগ যুগ ধরে প্রায় দু’শ ফুট উচ্চতা থেকে নিচে পতিত জলধারার চাপে কুণ্ডে সৃষ্টি হয়েছে ৪০-৫০ ফুট গভীর গর্ত আর চারিদিক থেকে প্রাকৃতিকভাবে অবস্থান করছে বিরাট বিরাট পাথরের স্তূপ। কিন্তু জলপ্রপাতের প্রবেশ পথে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার আঁকা-বাঁকা পথ এখনও অপ্রশস্ত ও বিপদজনক। এ কারণে বনবিভাগ জলপ্রপাতের উন্নয়নে প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।


শ্রীমঙ্গলের উপ-বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক প্রকল্পের আওতায় চলতি অর্থ বছর (২০০৯-২০১০) থেকে জলপ্রপাত এলাকার উন্নয়ন করা হবে। এরমধ্যে রয়েছে রাস্তা বরাবর পাহাড়ের পাশে 'ফেঞ্চিং ওয়াল' ও ব্রেস্ট ওয়াল নির্মাণ, মহিলাদের জন্য দুইটি টয়লেট ও ড্রেসিংরুম নির্মাণ, ছড়ার পাশের ফুট ট্রেইলের অংশে গ্রিল নির্মাণ, মন্দির থেকে জলপ্রপাত পর্যন্ত ক্যান্টিলিভার টেরাকোটা সেড' নির্মাণ এবং জলপ্রপাতের গর্তটিকে (কুণ্ড) ঘিরে অর্ধবৃত্তাকার আরসিসি পিলার সংবলিত স্টেইনলেস স্টিলের নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে যা এলজিইডি বাস্তবায়ন করবে।


কীভাবে যাবেন: ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে বাস ও রেলপথে শ্রীমঙ্গল আসতে পারেন। প্রতিদিন ঢাকা থেকে তিনটি ও চট্টগ্রাম থেকে দুইটি আন্তনগর ট্রেনে করে শ্রীমঙ্গল আসতে পারেন। দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, পঞ্চগড় থেকে সরাসরি বাসে শ্রীমঙ্গল আসা যাবে। দিনাজপুর, সৈয়দপুর, নীলফামারী, যশোর, খুলনা থেকে ট্রেনে ঢাকা হয়ে শ্রীমঙ্গল আসা যায়। ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ ও শ্যামলী পরিবহনে করে শ্রীমঙ্গলে আসতে পারেন। প্রতি ৩০ মিনিট পর পর শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশে এসব বাস ছেড়ে আসে। ভাড়া ৩৮০ টাকা। সময় লাগবে ৪ ঘণ্টা।


মাধবকুণ্ডে যেতে হলে সড়ক পথেই সবচেয়ে ভাল। ঢাকা থেকে আগে শ্রীমঙ্গল বা মৌলভীবাজার আসতে হবে। তারপর মাইক্রোবাস বা কার যোগে মাধবকুণ্ড যেতে পারেন। ঢাকা থেকে ট্রেনে আসলে শ্রীমঙ্গল বা কুলাউড়া জংশনে নেমে মাইক্রোবাস বা কার যোগে সহজেই মাধবকুণ্ডে পৌঁছানো যায় ।


কোথায় থাকবেন : মাধবকুণ্ডে থাকার ভাল ব্যবস্থা নেই। জেলা পরিষদের একটি বাংলো আছে। সেখানে থাকতে হলে আগে জেলা পরিষদের অনুমতি নিতে হবে। সবচেয়ে ভাল ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে মৌলভীবাজার বা শ্রীমঙ্গল এসে রাতযাপন করতে পারেন। কোথায় খাবেন: মাধবকুণ্ডে একটি ভাল রেস্টুরেন্ট রয়েছে। সেখানে আপনি খেতে পারেন। অথবা মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল বা কুলাউড়া এসেও আপনি খাবার কাজ সেরে নিতে পারেন ।

Travel, Tourism, 
এই শিতে ঘুরে আসুন মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, 
Visit Madhabkund Falls this winter,