দেশের সর্বাধিক চা বাগান অধ্যুষিত জেলা মৌলভীবাজার। সংখ্যায় চা বাগান হলো ৯১টি। ইতোমধ্যে এ জেলাকে ঘোষনা করা হয়েছে পর্যটন জেলা হিসেবে। চায়ের রাজধানী খ্যাত এ জেলার অপার নৈসর্গিক সৌন্দর্য সাত উপজেলাকে করেছে বৈচিত্র্যময়। নয়ন ভুলানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এ জেলায় কী নেই? জলপ্রপাত, হাওর-বাওর, চা-বাগান, বনাঞ্চল, রিসোর্ট, কটেজ, পাঁচতারকা মানের টি রির্সোট অ্যান্ড গলফ সবই রয়েছে এই পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারে।


জেলার বড়লেখা উপজেলার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে। ইতোমধ্যে কমলগঞ্জ উপজেলার হামহাম জলপ্রপাত দেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। এ স্থানগুলো এখন পর্যটকের পদভারে মুখরিত। এছাড়াও কমলগঞ্জে চা বাগানের ভেতর মাধবপুর লেক, শ্রীমঙ্গল ও কুলাউড়ায় খাসিয়া পান পুঞ্জিতে পানের বরজ, শ্রীমঙ্গলে লেবু, আনারস বাগান, উঁচু-নিচু টিলায় চা বাগানের সারি, বড়লেখার মুরাইছড়া ইকো-পার্ক, কুলাউড়ার হাকালুকি হাওর, মৌলভীবাজার জেলা সদরের অদুরে


বর্ষিজোড়া ইকো-পার্ক, শ্রীমঙ্গলের হাইল-হাওর, বাইক্কা বিল, রাজনগরের কমলা রানীর দিঘি, শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত দেশের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় চিরহরিৎ ও মিশ্র চিরহরিৎ বন লাউয়াছড়া জাতীয় পার্ক মৌলভীবাজার জেলাকে প্রকৃতির এক অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে পরিণত করেছে। দর্শনীয় স্থানগুলো এ জেলাকে করে তুলেছে মোহনীয়।


ঢাকা থেকে সড়কপথে মৌলভীবাজার আসতে জেলার প্রবেশপথে সাতগাঁও চা বাগানে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে পর্যটকদের স্বাগত জানাতে তৈরি করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন চা-কন্যা ভাস্কর্য। চা বাগান অধ্যুষিত এ অঞ্চলের ১৬১ বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতীক চা গাছ থেকে এক চা-কন্যার দু'টি পাতা একটি কুঁড়ি তোলার দৃশ্য এ ভাস্কর্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।


এ জেলায় রয়েছে নৃ-তাত্বিক জনগোষ্ঠীর বাস। খাসিয়া, মণিপুরি, গারো, সাঁওতাল, টিপরা সম্প্রদায়ের স্বতন্ত্র জীবনাচার এবং বৈচিত্র্যময় জীবন ও সংস্কৃতি দেখলে খানিক সময়ের জন্য হলেও পাহাড়ি হয়ে প্রকৃতির কোলে মিশে যেতে মন চাইবে। এদের জীবন ও সংস্কৃতি দেখতে পর্যটকদের বারবার মৌলভীবাজার ভ্রমণে উৎসাহিত করে। প্রতিবছর চা বাগানগুলোতে চা শ্রমিকদের 'ফাগুয়া উৎসব', টিপরাদের 'বৈসু উৎসব', মণিপুরিদের 'রাস উৎসব' ও গারোদের ওয়ানগালা উৎসব' উদযাপিত হয় খুব জাঁকজমকপূর্ণভাবে। তাদের এই আনন্দ উৎসবে মিশে যেতে পারেন আপনিও।


দু'টি পাতা একটি কুঁড়ির সবুজে ভরা মায়াবী স্বপ্নপুরী মৌলভীবাজার জেলার সবুজ চা বাগান ঘেরা উঁচু-নিচু টিলাগুলোর সৌন্দর্য বলে বুঝানো যাবে না। ছোটবড় টিলার ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে পাহাড়ি ছড়া। পাহাড়ি ভূমির ঘন সবুজ অরণ্যের বুক চিরে বয়ে যাওয়া এসব ছড়ার সৌন্দর্যই আলাদা। মাইলের পর মাইল জুড়ে বিস্তৃত বনাঞ্চলে নানা প্রজাতির পশু-পাখির বাস। পাহাড়, বন


বনানি, পাখ-পাখালির কলকাকলি, ঝরনা, হ্রদ, জলপ্রপাত, চা বাগানের সমারোহ, লেবু, আনারস, রাবার বাগান, লেক, ইকো পার্ক এ জেলাকে প্রকৃতি সাজিয়েছে অপরূপ রূপে।


এসব ছাড়াও বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ, পাঁচগাঁওয়ের দুর্গামণ্ডপ, মনু ব্যারেজ, কাউয়াদিঘির হাওর, চা জাদুঘর, টি রিসোর্ট, নির্মাই শিববাড়ি, চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, ডিনস্টন সিমেট্রি, বার্নিশটিলা, গলফ ফিল্ড, পাখিবাড়ি, বধ্যভূমি ৭১, লালমাটি পাহাড়, মৃত্যুঞ্জয়ী ৭১ পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ ।


কীভাবে আসবেন : ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে বাস ও রেলপথে শ্রীমঙ্গল আসতে পারেন। শ্রীমঙ্গলে অনেক হোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস রয়েছে। আপনি যে কোন একটিতে উঠতে পারেন। শ্রীমঙ্গল থেকে রিকশা, অটোরিকশা, সিএনজি অটোরিকশা বা প্রাইভেট কারে করে পর্যটন স্পটগুলোতে যেতে পারবেন। প্রতিদিন ঢাকা থেকে তিনটি ও চট্টগ্রাম থেকে দুইটি আন্তঃনগর ট্রেনে করে শ্রীমঙ্গল আসতে পারেন । দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, পঞ্চগড়, থেকে সরাসরি বাসে শ্রীমঙ্গল আসা যাবে। দিনাজপুর, সৈয়দপুর, নীলফামারী, যশোর, খুলনা থেকে ট্রেনে ঢাকা হয়ে শ্রীমঙ্গল আসা যায়। ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ ও শ্যামলী পরিবহনে করে শ্রীমঙ্গলে আসতে পারেন। প্রতি ৩০ মিনিট পর পর শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশে এসব বাস ছেড়ে আসে। ভাড়া ৩৮০ টাকা। সময় লাগবে ৪ ঘণ্টা। ট্রেনে আসলে শ্রীমঙ্গল নেমে যেকোন বাহনে আপনি মৌলভীবাজার যেতে পারেন।


ঢাকার কমলাপুর থেকে ভোর ৬.৪০ মিনিটে (মঙ্গলবার ছাড়া) ছেড়ে আসে আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস। দুপুর ১২ টায় প্রতিদিন ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, কালনী এক্সপ্রেস ছেড়ে আসে বিকেল ৪ টায় (শুক্রবার ছাড়া), রাত ৯.৫০ মিনিটে ছাড়বে উপবন এক্সপ্রেস (বুধবার ছাড়া) ।


চট্টগ্রাম থেকে সকাল ৮.১৫ মিনিটে ছেড়ে আসে পাহাড়িকাএক্সপ্রেস (সোমবার ছাড়া), রাত ৯.৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসে আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস (শনিবার ছাড়া)।


অন্যদিকে শ্রীমঙ্গল থেকে ঢাকার উদ্দেশে কালনী এক্সপ্রেস ছেড়ে যায় সকাল ৮.৪০ মিনিটে (শুক্রবার বন্ধ), জয়ন্তিকা সকাল ১০.২৬ মিনিটে (বৃহস্পতিবার বন্ধ), পারাবত এক্সপ্রেস বিকেল ৫.০৮ মিনিটে (মঙ্গলবার বন্ধ)। উপবন এক্সপ্রেস রাত ১২.১৮ মিনিটে। এছাড়া শ্রীমঙ্গল থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস শ্রীমঙ্গল থেকে ছেড়ে যায় দুপুর ১২.৪১ মিনিটে (শনিবার বন্ধ), উদয়ন ছেড়ে যায় রাত ২৩.২৪ মিনিটে (রবিবার বন্ধ) ।


ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গলের ট্রেনের ভাড়া এসি সিট ৫১২ টাকা (জয়ন্তিকা/পারাবত), এসি সিট কালনী ৪২৬ টাকা, স্লিপিং বার্থ ৪৯৫ টাকা, এসি স্লিপিং বার্থ ৮১৬ টাকা, ১ম চেয়ার ২৯৫ টাকা, শোভন চেয়ার ২২৫ টাকা, শোভন ১৮৫ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে শ্রীমঙ্গলের ভাড়া ১ম বার্থ সিট (উদয়ন) ৫৯৫


টাকা, এসি সিট (স্নিগ্ধা) ৫২৪ টাকা (পাহাড়িকা), ১ম সিট ৩৬৫ টাকা (পাহাড়িকা), শোভন ২৩০ টাকা (পাহাড়িকা/উদয়ন)। কোথায় থাকবেন মৌলভীবাজার ও শ্রীমঙ্গলে গড়ে উঠেছে


অনেক আবাসিক হোটেল, রেস্টহাউস, বাংলো, রিসোর্ট ও কটেজ।


এর যে কোন একটিতে আপনি থাকতে পারেন।


কোথায় খাবেন: মৌলভীবাজার ও শ্রীমঙ্গলে অনেক ভালো হোটেল রয়েছে। আপনি এগুলোর যে কোন একটিতে খাওয়ার কাজ সেরে নিতে পারেন। তবে রিসোর্ট, কটেজ অথবা বাংলোতে থাকলে আপনার চাহিদা মতো তারাও খাবার পরিবেশন করে থাকে।


আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ আল্লাহ হাফেজ 


#tourist Moulvibazar  #Tourist Center