ভারতবর্ষে মঙ্গোলদের থামিয়ে দেন যিনি।


বিশ্বের ইতিহাসের সামনে আমাদের উপমহাদেশের ইতিহাস যেন অসহায় হয়ে পরেছে।আমরা এই উপমহাদেশের ইতিহাস খুব কমই জানি।প্রায় ৭০০ বছর ধরে শাসন করা ভারতবর্ষ তথা দিল্লি শাসনের ইতিহাস আমরা কতজন জানি?তাতারিদের আগমনে যখন একের পর এক শহরের নিয়ন্ত্রণ এসে যাচ্ছিল তাদের হাতে যখন শত শত নগর-সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল বড় বড় প্রাসাধ,দূর্গ হার মেনে যাচ্ছিল যখন ১২৫৮ সালে মুসলিমদের প্রাণ কেন্দ্র, আরব্য রজনীর বাগদাদও তাদের নিকট ধ্বংস হয়েছিল, 

 

ঠিক তখনি প্রথম তাতারিদের জয়রথ থামিয়ে দেয় মিশরের মামলুকরা।আইনে জুলুতের যুদ্ধ থেকেই যেন মঙ্গলদের পতনের কাহিনী রচিত হয়েছিল সাইফুদ্দিন কুতৌযা আর তার বীর সেনাপতি রুকুনদ্দিন বাইবার্সের হাত ধরে।এরপর মঙ্গলদের পথরোধ করার সবথেকে সফলতম ইতিহাস আমাদের ভারতবর্ষের।পরপর ৬ বার আক্রমন করেও মঙ্গলরা যখন ভারতবর্ষ পুরোপুরি নিতে পারেনি তখন হয়ত তারাও তাদের ভারত জয়ের স্বপ্ন ত্যাগ করে এদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নেন।পরপর ৬বার মঙ্গল আক্রমনে বিজয়ের নায়ক সুলতান আলাউদ্দীন খিলজী।সুলতান আলাউদ্দীন খিলজি দিল্লির সিংহাসনে আহোরনের পর তার স্বপ্নটাকে সত্যি করতে নিরন্তর প্রচেষ্টা করেন।

 

তার স্বপ্ন ছিল আলেকজেন্ডার দ্যা গ্রেইটের মতো পুরো পৃথিবী শাসন করা।এ স্বপ্নটা তার মনে তীব্রভাবেই ছিল।তিনি নিজেকে ২য় আলেকজেন্ডার দ্যা গ্রেইট নামে পরিচিত করতে চাইতেন।তার সময়কার মুদ্রা এবং জুমআর খুতবার আগে তার নাম উচ্চারণ করার নিয়ম চালু করেন।কিন্তুু আলেকজেন্ডার দ্যা গ্রেইটের মতো পুরো পৃথিবী শাসন করার অবাস্তব একটি স্বপ্ন এটি আলাউদ্দীন খিলজিকে বুঝাতে সক্ষম হয় তার কাজী।আলাউদ্দীন খিলজি পুরো পৃথিবী শাসন করার স্বপ্ন বাদ দিয়ে উপমহাদেশে বিশাল এক সম্রাজ্যে স্হাপনের স্বপ্ন দেখা শুরু করেন।এতে অনেকটাই সফলও হন তিনি।তিনিই মুসলিম ইতিহাসে প্রথম শাসক যিনি ভারত,বাংলাদেশ, পাকিস্তানের সুলতান ছিলেন।

 

তারপরে একমাএ মুঘল সম্রাট আরঙ্গজেব একসাথে ভারত,বাংলাদেশ,পাকিস্তানের পুরো জায়গা নিজ সম্রাজ্যভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।বিশাল এই সম্রাজ্যের একক অধিপতি হিসাবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।আলাউদ্দীন খিলজি ১২৬৬ সালে সিংহাসন আহোরনের কিছুকাল পরেই মঙ্গোলরা ভারতবর্ষে আক্রমন করে।কিন্তুু সেনাপতি জাফর খান সেবার মঙ্গলদের সমুচিত শিক্ষা দেন।মঙ্গলদের ভারত আক্রমন করা হয় সেনাপতি সালভির নেতৃত্বে। সালভি সহ ২০০০ মোঙ্গলদের বন্দি করে রাজধানী  দিল্লী পাঠানো হয়।
মোঙ্গলদের ভয়াবহ আক্রমণ পরিচালিত হয় ১২৯৯ সালে। সেইবার কুতলুঘ খাজা ২ লক্ষ মোঙ্গলবাহিনী নিয়ে ভারত আক্রমন করেন। মোঙ্গলরা দিল্লীর উপকন্ঠে চলে আসে। সুলতান আলাউদ্দিন ৩ লক্ষ অশ্বারোহী ও ২৭,০০০ হস্তী সম্বলিত বিরাট বাহিনী নিয়ে শহরের বাহিরে মোঙ্গলদের মুখোমুখি হন। স্বয়ং সুলতান এই বাহিনীর নেতৃত্ব দেন।

 

 সেনাপতি জাফর খানের প্রচন্ড আক্রমণে মোঙ্গলবাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পরে। কিন্তুু আলাউদ্দিন খিলজির সর্বশ্রেষ্ঠ সেনাপতি জাফর খান নিহত হন। তীব্র আক্রমণে মোঙ্গলবাহিনী পলায়ণ করে।একই বছর তারঘী নামক একজন নেতার অধীনে মোঙ্গলরা বিরাট বাহিনী নিয়ে পুনরায় ভারত আক্রমন করে। সুলতান আলাউদ্দিন একডালা দূর্গে আত্মগোপন করেন। কিন্তুু নিজামুদ্দিন আউলিয়ার কারামতে সুলতান এই বিপদ থেকে পরিত্রাণ লাভ করেন। ১৩০৪ সালে আলী বেগ ও খাজা তুসের নেতৃত্বে মোঙ্গলরা আবার আক্রমণ করে।

 

 সুলতানের সেনাপতি গাজী মালিক গিয়াসউদ্দিন তুঘলক মোঙ্গলদের বিপুল ক্ষতি সাধন করে হটিয়ে দেন। আলাউদ্দিন খিলজির সময় মোঙ্গলরা শেষ আক্রমণ করে ১৩০৭-১৩০৮ সালে। তাদের নেতা ইকবাল মনদ পরাজিত ও নিহত হন। অনেক মোঙ্গল কমান্ডারদের হাতীর পদতলে পিষ্ট করা হয়। এভাবে বারবার পরাজয়ের পর আলাউদ্দিন খিলজির আমল থেকে ৯০ বছর পর তৈমুর_লঙের ভারত আক্রমনের আগ পর্যন্ত মোঙ্গলরা আর আক্রমণ করতে সাহস করেনি।


মোঙ্গলদের থেকে দিল্লী সালতানাতকে রক্ষা করতে সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি সীমান্ত নীতি গ্রহণ করেন। সীমান্তে মোঙ্গলদের আগমনের পথে অনেক পুরাতন দূর্গ মেরামত করা হয় এবং অনেক নতুন দূর্গ নির্মাণ করা হয়। রাজকীয় বাহিনীকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি সামান ও দিপালপুরের সীমান্ত ঘাটিগুলোতে যুদ্ধের জন্য বাহিনী মোতায়েন করা হয়। রাষ্ট্রীয় কারাখানায় যুদ্ধাস্ত্র নির্মানের জন্য প্রকৌশলী নিয়োগ করা হয়। মোঙ্গলদের শায়েস্তা করার পর এবার আলাউদ্দিন খিলজি রাজপুত রাজ্য বিজয়ে অগ্রসর হন।ভারতীয় উপমহাদেশে মঙ্গলদের বধ করার নায়ক সুলতান আলাউদ্দীন খিলজীর নাম ইতিহাসে স্বর্নাক্ষরে চিরকাল অম্লান হয়ে থাকবে।