বাদশাহী_মসজিদ_পাকিস্তানের_পাঞ্জাব_প্রদেশের_রাজধানী_লাহোরে_একটি_মুঘল_যুগের_মসজিদ। এই মসজিদ সৌন্দর্যের দিক থেকে মুঘল সাম্রাজ্যের স্মৃতি বহন করে।

এটি পাকিস্তান ও দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম মসজিদ এবং পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম মসজিদ। ষষ্ঠ মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব ১৬৭১ সালে এই মসজিদটি নির্মাণ করেন এবং ১৬৭৩ সালে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। মসজিদটি ১৬৭১ সালে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব দ্বারা চালু করা হয়েছিল, সম্রাটের পালক ভাই এবং লাহোরের গভর্নর মুজফফর হুসেন - যিনি ফিদাই খান কোকা নামেও পরিচিত। মারাঠা বিদ্রোহী শিখ রাজা ছত্রপতি শিবাজির বিরুদ্ধে তাঁর সামরিক অভিযানের স্মরণে আওরঙ্গজেব মসজিদটি তৈরি করেছিলেন। নির্মাণের মাত্র দুই বছর পর, মসজিদটি ১৬৭৩ সালে খোলা হয়।

#তবে_শিখরা ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে লাহোর দখলের মাধ্যমে পাঞ্জাব প্রদেশের শাসনক্ষমতা হাতে নিয়ে বাদশাহী মসজিদে নামাজ আদায় নিষিদ্ধ করে দেয়। তারা মসজিদটিকে সামরিক বাহিনীর #ঘোড়ার_আস্তাবল_হিসেবে_ব্যবহার_করে। পরবর্তীতে শাসনক্ষমতার উত্তরাধিকার নির্ধারণের যুদ্ধ বেঁধে গেলে মহারাজা রঞ্জিত সিং প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য মসজিদের মিনারগুলোতে হাল্কা কামান স্থাপন করেন। লাহোর দুর্গে অবরুদ্ধ প্রতিপক্ষের ওপর হামলা করার কাজে এই কামানগুলো ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে লাহোর দুর্গ থেকে নিক্ষিপ্ত গোলার আঘাতে মসজিদেরও ক্ষতি হয়।

১৮৪৯ সালে #ব্রিটিশরা_প্রবল_যুদ্ধের_মাধ্যমে_শিখদের_হাত_থেকে লাহোর শহর দখল করে নেয়। ব্রিটিশরা ১৮৫৫ সাল পর্যন্ত মসজিদের এই স্থাপনাকে সেনাঘাঁটি ও গোলাবারুদ রাখার স্থান হিসেবে ব্যবহার করে। মুসলমানদের তীব্র আন্দোলনের মুখে ওই বছর ব্রিটিশ উপনিবেশবাদী সরকার বাদশাহী মসজিদ মুসলমানদের নামাজ আদায়ের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। তবে হস্তান্তরের আগে পূর্ব দিকের ভবনটিকে ধ্বংস করে ফেলে। লাহোর দুর্গে বসে যাতে মসজিদে মুসলমানদের তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করা যায়, সে জন্য দখলদার ব্রিটিশরা এ কাজ করেছিল।

১৮৬৫ সালে #মসজিদটি_পুনর্নির্মাণের_উদ্যোগ_নেওয়া_হয়। পাঞ্জাব সরকার মসজিদ মেরামতের জন্য কিছু অর্থ বরাদ্দ দেয় এবং লাহোরের মুসলমানরা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী মসজিদ পুনর্নির্মাণের জন্য অর্থ প্রদান করেন। এর ফলে ১৮৭৫ সাল থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত ধীরে ধীরে এই মসজিদের সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের কাজ হয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বাদশাহী মসজিদকে প্রাথমিক নকশার আদলে পুনরায় নির্মাণ করা হয়। ২০০০ সালে এই মসজিদের মূল চত্বরে মর্মর পাথর বসানো হয় এবং এর ফলে মসজিদের সৌন্দর্য বহুগুণে বেড়ে যায়।

#মসজিদের_চারদিকের_বিশাল_খোলা_ময়দান_রয়েছে। সামনের সুবিশাল চত্বরসহ মসজিদের আয়তন প্রায় দুই লাখ ৭৬ হাজার স্কয়ার ফুট। ১৯৬ ফুট উচ্চতার দৃষ্টিনন্দন আটটি মিনার ও তিনটি গম্বুজ মসজিদটিকে বেশ দৃষ্টিনন্দন করেছে। লাল মার্বেল পাথরে তৈরি মসজিদটি এতটাই সুদর্শন যে, ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে তা সহজেই স্থান করে নিয়েছে। মসজিদের রাজকীয় সিঁড়ির ২২টি ধাপ পেরিয়ে মূল ফটকে পৌঁছতে হয়। আর মূল ফটকে ক্যালিগ্রাফিতে মসজিদের নাম লেখা রয়েছে, ‘মসজিদ আবুল জাফর মহিউদ্দিন মুহাম্মাদ আলমগীর বাদশাহ গাজী।’ ভেতর আর আঙিনা মিলে এই মসজিদের ধারণক্ষমতা এক লাখ মুসল্লি।

#পরে_একে_ইকবাল_পার্ক_নামকরণ_করা_হয়। সে হিসেবে মসজিদটি বর্তমানে ইকবাল পার্কে অবস্থিত। এই মসজিদেরই দক্ষিণ পাশে মহাকবি ইকবাল (রহিঃ) কবর অবস্থিত। বাদশাহী মসজিদের দ্বিতীয় তলায় রয়েছে একটি সিন্দুক, যেখানে রাসুলুল্লাহ (সাঃ), হজরত আলী (রাঃ), হজরত ফাতিমা (রাঃ), ইমাম হোসেইন (রাঃ), ওয়ায়েস কারনি এবং আব্দুল কাদের জিলানি (রহিঃ) এর ব্যবহৃত সরঞ্জাম রয়েছে বলে প্রসিদ্ধি রয়েছে। জানা যায়, সিরিয়া ও তুরস্ক জয় করার পর আমির তৈমুর গুরগানি এই পবিত্র সরঞ্জামগুলো নিজের রাজধানী সমরখন্দে নিয়ে যান। পরবর্তীতে মোগল সম্রাট জহির উদ্দিন মুহাম্মাদ বাবর ভারতবর্ষে আসার সময় সেগুলো দিল্লিতে নিয়ে আসেন। মোগল সম্রাটরা বংশ পরম্পরায় এগুলো সংরক্ষণ করেন। অবশেষে সাইয়্যেদ নুরুদ্দিন মুনাওয়ার এগুলো ক্রয় করে বাদশাহী মসজিদে ওয়াকফ করে দেন।