মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মতের বিরুদ্ধে দাজ্জাল হচ্ছে ইবলিস শয়তানের সর্বশেষ ভরসা। ইবলিস তার মাধ্যমে দ্বীনে মুহাম্মদীকে মিটিয়ে বিশ্বময় ইবলীসি ধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে চায়। যেহেতু দাজ্জাল নিরাশ্রয় শক্তিসত্ত্বেও সন্দেহ এবং শংকার দোলাচলে দোদুল্যমান; তাই সে তার আত্মপ্রকাশের পূর্বে এমন সকল শক্তিকে নিঃশেষ করে দিতে চায়, যারা পরবর্তীতে তার পথে কাটা হয়ে দাঁড়াতে পারে। সমগ্র পৃথিবীর খনিজ সম্পদ,


 খাদ্যসম্পদ, পানীয়সম্পদ এবং সেনাশক্তিসহ সকল ক্ষেত্রে সে তার কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সেনাবাহিনীর দিক দিয়ে কোন রাষ্ট্রই তার প্রতিপক্ষ হবে না। সকল দেশের সরকারই তার তৈরিকৃত 'নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ড সিস্টেমকে সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত করে থাকবে। সমস্ত সরকারই তার কল্পিত বাণিজ্যিক পদ্ধতি এবং তার নিজস্ব সংস্থা বিশ্বব্যাংক এবং বিশ্ব বাণিজ্যিক সংস্থার সাথে সম্পূর্ণরূপে লেনদেন করে থাকবে। আক্কীদাগত দিক থেকে সারাবিশ্ব তার গণতান্ত্রিক সরকারি পদ্ধতির উপর পূর্ণ আস্থাশীল থাকবে। বিশেষত মুসলমানগণ তাদের অন্তর থেকে ইসলামী খেলাফতের আকাঙ্ক্ষা সম্পূর্ণরূপে বর্জন করবে। তারপরও যদি মুষ্টিমেয় কিছু লোকের অন্তরে এর আকাঙ্ক্ষা থাকে, তবে তারা তা বাস্তবায়নে অক্ষম থাকবে।


পশ্চিমা বিশ্ব হচ্ছে দাজ্জালের জন্য নিজের বাড়ির মত। ইবলিসী শাসনব্যবস্থা যাই হোক (Socialism) বা (Capitalism) হোক। বিশ্ব একপ্রান্তশীল হোক বা ভিন্নপ্রান্তশীল। তাতে কিছুই যায় আসে না।


মোটকথা সিস্টেম তার দেয়া হওয়া চাই। দাজ্জালের মূল এন্টি হচ্ছে ইসলামী জীবনব্যবস্থা এবং জিহাদী শক্তি। ১৯৯১ সালের পর পৃথিবীর বুকে এমন একটি বিপ্লবী ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে, যার উপস্থিতিতে দাজ্জাল কখনই পৃথিবীর বুকে আত্মপ্রকাশ করার দুঃসাহস দেখাবে না। দুনিয়ার যে কোন


প্রান্তরে ইসলামী জীবনব্যবস্থার কথা হয়, তার মাধ্যমে ইবলিস এবং দাজ্জালের আত্মা ফেটে পড়ার উপক্রম হয়। পক্ষান্তরে যদি কোথাও ইসলামী শাসনব্যবস্থা বাস্তবায়িত হয়ে যায়, তবে তো তাদের সকল আশা-আকাঙ্ক্ষা কার্যক্রম এবং সার্বিক প্রচেষ্টা বাঞ্চাল হয়ে যাবে।


১৯৯৬ সালে তালেবানরা রক্তের বন্যা ঝরিয়ে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর মাধ্যমে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিদানকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। তালেবানদের ইসলামী শাসনব্যবস্থা বিশ্বজুড়ে দাজ্জালের সিষ্টেম পূজাকারীদের জন্য মৃত্যুর পয়গাম ছিল। দাজ্জাল জানত যে, ইসলামী বাণিজ্যিক ব্যবস্থার উপকারিতা সুদের জঘন্য কারবারীতে নিমজ্জিত ব্যক্তিরা যদি দেখে ফেলে, তাহলে তারাও নিজেদের এলাকায় ইসলামী সিস্টেম চালু করার আন্দোলন শুরু করে বসবে। স্বাধীনতা এবং সমঅধিকারের কথা বলে নারীজাতিকে লাঞ্ছিত অপদস্থ করা হয়েছিল অতঃপর তালেবানরা নারীদেরকে সম্মানের পালংকে বসিয়েছিল। 


এমনকি ব্রিটিশ নারীরাও তা স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেনে নিয়েছিল এবং তালেবানদের আচরণ দেখে তারা ইসলাম গ্রহণ করেছিল। ইবলিস শয়তান এবং দাজ্জালের সাজানো স্টেজগুলি তা দেখে কাঁপতে শুরু করেছিল। শুরুতে ইবলিসের আশা ছিল যে, অন্যান্য মুসলিম সরকারদের মত তাদেরকেও স্বীয় তেলেস্মাতির বোতলে আবদ্ধ করে ফেলবে। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে দাজ্জাল তার আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে দিয়ে আমীরুল মুমিনীন মোল্লা মোহাম্মদ উমর (আল্লাহ তাকে হেফাজত করুন) কে বশ করার চেষ্টা করেছিল। সার্বিক সহযোগিতার লোভ, যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানকে নতুন করে নির্মাণ এবং সরকারি ভবনসমূহের পূণনির্মাণের জন্য অনেক কাকুতি-মিনতি করেছিল। 


জাতিসংঘের দূতগণ একের পর এক শহীদদের ভূমিতে অপমান, লাঞ্ছিত ও বিতাড়িত হয়ে কুকুরের মত ঘুরাঘুরি করছিল— ঠিক যেমনভাবে মুসলিম রাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তাগণ ইউরোপ-আমেরিকায় গিয়ে করে থাকে। পশ্চিমাবিশ্বের পুরুষজাতি যে নারীদেরকে কখনো সম্মানের চোখে দেখেনি, তালেবান তাদেরকে আপন বোনের মত মনে করে পবিত্র হিজাবের দুপাট্টা দিয়ে স্বীয় পবিত্র ভূমিতে নামিয়েছিল। জাতিসংঘের কতিপয় অহংকারী নেতৃবর্গ সেখানেও তাদের নারীদেরকে উলঙ্গ রাখার জন্য বাধ্য করলে তালেবানরা তাদের ভাই হিসেবে এ অপমান মুখ বুঝে সহ্য করেছিল।


আলোচনা-পর্যালোচনার পর দাজ্জালী শক্তি নিজেদের উত্তর সংঘের মাধ্যমে কাবুলের উপর চড়াও হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করেছিল। কিন্তু এখানেও তাদের সকল তদবীর ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছিল এবং ব্যর্থ হয়েই তারা ওখান থেকে প্রস্থান করেছিল।


দাজ্জালী শক্তির তদবীরসমূহ ১৯৯৮ সালে এসে একত্রিত হয়। তারপরও তাদের প্রচেষ্টা একে একে ব্যর্থ হতে দেখা যায়। পক্ষান্তরে ইসলামী শাসনব্যবস্থার সুফলসমূহ আস্তে আস্তে পৃথিবীবাসীর সামনে প্রকাশ হতে শুরু করে। উলামায়ে কেরাম কিতাবের পাতায় বন্দি থাকা ইসলামী শাসনব্যবস্থা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছিল। পৃথিবীর বড় বড় ব্যবসায়ীবৃন্দ ইসলামী জীবনব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করার জন্য আফগানিস্তানের পথে পাড়ি জমাচ্ছিল। দ্বীনে মুহাম্মদীর উম্মতগণ দলে দলে হক্কের রাস্তায় চলার জন্য আফগানের মাটিতে হিজরত করছিল। 


প্রকৃত বাস্তবতা ধীরে ধীরে মানুষের অনুধাবন হচ্ছিল। আর এদিকে ইবলিস শয়তান নিরাশমনে তার সর্বশেষ চক্রান্তটি ১৯৯৯ সালে সম্পন্ন করে এবং পৃথিবীর জাগায় জাগায় তার অনুসারীদের পুনরায় ফিট করতে শুরু করে। তন্মধ্যে তার সর্বপ্রথম পদক্ষেপ ছিল পারভেজ মুশাররফের হাতে পাকিস্তানের নেতৃত্ব তুলে দেয়া। তালেবানকে খতম করে তার শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাটি সে ১৯৯৮ সালেই সম্পন্ন করেছিল। কিন্তু তার আসল চেষ্টা ছিল প্রথমে আরব মুজাহিদীনকে আফগান ভূখণ্ড থেকে কৌশলে বহিষ্কার করা। তা না হলে তার দ্বতীয় পরিকল্পনাটিও প্রথমটির মত আরব মুজাহিদীনের বীরত্বগাথা অপারেশান আর তালেবানদের সর্বাত্মক সহযোগিতার মাধ্যমে পুনরায় বাঞ্চাল হয়ে যাবে। ১১ সেপ্টেম্বরে আমেরিকার টুইন টাওয়ারে হামলা মূলত দাজ্জালের সকল স্বপ্নকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন তার (Victory Without War)


গ্রন্থে উল্লেখ করেন- ১৯৯৯ সালের মধ্যে আমেরিকা সারাবিশ্বের শাসক হবে।


এ মহা বিজয় কোন যুদ্ধ ছাড়াই তাদের অর্জিত হবে। এরপর নেতৃত্বের বিষয়টি 'মাছীহ' (দাজ্জাল) নিজে এসে সামলিয়ে নেবেন। মনে হয়- উপরোক্ত সাল পর্যন্ত মাছীহের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন ছিল। মার্কিনীদের দায়িত্ব শুধু


ব্যবস্থাপনাগুলো সম্পন্ন করা। এরপরের নেতৃত্ব মাছীহ নিজেই চালাবেন।


(ভিকটোরী উইদাউট ওয়ার)


আমেরিকা ও ইউরোপে অজস্র টিভি-চ্যানেল ও রেডিও স্টেশন এমন রয়েছে- যারা দিন রাত মাছীহ (কানা দাজ্জালের আগমনের ব্যাপারে তাওরাত ও ইঞ্জিলে বর্ণিত ভবিষ্যদ্বাণীগুলো শুনিয়ে জনসাধারণকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করছে। এমনকি সকল মার্কিন প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত ব্যাপারটি নিয়ে খুবই আশাবাদী যে, তাদের সামনে প্রতিশ্রুত মাছীহ (কানা দাজ্জাল) আসবেন এবং ইসলাম ধর্মকে নিঃশেষ করে বিশ্বময় শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন।


উল্লেখিত বিষয়টি সামনে রেখে মার্কিন সেনা অফিসারগণও তাদের কার্যক্রমগুলো সাজাচ্ছেন। একবার আমেরিকা প্রবাসী একজন পাকিস্তানী মার্কিন সেনাবাহিনীতে ভর্তি হতে যায়। সমস্ত বিভাগে সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হওয়ার পর যখন সে ইন্টারভিউয়ের জন্য যায়। তখন ইন্টারভিউ অফিসারগণ তাকে জিজ্ঞাসা করে যে, ইমাম মাহদীর ব্যাপারে তোমার মতামত কি? চিন্তা করেন- মার্কিন সেনাবাহিনীতে ভর্তি হতে ইচ্ছুক একজন মুসলমানকে কি ধরনের প্রশ্ন করা হচ্ছে। বর্তমান যুগে প্রায় সকল ধর্মাবলম্বীগণই কোন একজন মাছীহের আগমনের ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহের সাথে প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে। পাশাপাশি ধর্মীয় গুরুগণও তাদের অনুসারীদের ভয়ানক যুদ্ধসমূহের জন্য প্রস্তুত করছে। আর এদিকে মুসলমানদের অযোগ্য নেতৃবর্গ তাদেরকে যুদ্ধের ভয় দেখিয়ে ঘরে সারাদিন টিভির সামনে বসে বসে সময় কাটানোর তালীম দিচ্ছে।


বাস্তবতা সকলের চোখের সামনে। কাফেরদের জোটবদ্ধ সেনাবাহিনী ইরাক ও আফগানিস্তানে মুসলমানদের উপর আগ্রাসী হয়েছে। বিপরীতে তালেবান এবং মুজাহিদীন মুসলমানদের পক্ষ থেকে ইসলাম প্রতিরক্ষার দায়িত্ব পালন করছে। দাজ্জালের বিশ্বময় শাসন ও খোদায়ী প্রতিষ্ঠার পথে এখন শুধু একটিই বাধা। জিহাদের এ শক্তিকে খতম করে দাজ্জালের জোটবদ্ধ সৈনিকদল দাজ্জালের জন্য নতুন ধর্মকে বিশ্বজুড়ে বাস্তবায়িত করে দেখাতে চায় ।


নতুন এ ধর্মের জন্য কিভাবে রাস্তা প্রশস্ত করা হয়েছে এবং দাজ্জালের আগমনের জন্য কিরূপ প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। মনযোগ দিয়ে একটু চিন্তা


'আমেরিকার চাওয়া-পাওয়া হচ্ছে- জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে এমন বাহিনী গঠন করতে সাহায্য দেয়া হোক, যারা দ্রুত এ্যাকশান নিতে সক্ষম। এ বাহিনীর সংখ্যা প্রাথমিক পর্যায়ে বারটি দেশ কর্তৃক ষাট হাজার ঘোষণা করা হয়েছে। (রচনা- নেগার জোসেফ নায়ে, সাবেক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী, নিউইয়ার্ক টাইম- ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২ইং)


বাস্তবেই যদি তারা বিশ্বময় শাস্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তবে না লালবাহিনী লাগবে, না মার্কিন সেনাবাহিনীর দরকার পড়বে। বরং আমাদের নীল রঙ্গের হেলমেট পরিহিত একাধিক রাষ্ট্র কর্তৃক জোটবদ্ধ বাহিনীর শক্তি দরকার। তারাই একমাত্র বিশ্বব্যাপী শাস্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে। (নিউইয়ার্ক টাইমস-১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২ইং)


উল্লেখ্য যে, ইহুদীরা নীল রংকে দাজ্জালের ঊর্ধ্বশাসনের প্রতীক মনে করে TOPTIME ব্লগের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ আল্লাহ হাফেজ।