হজরত বাকি ইবনে মুখাল্লাদ রহ. ছিলেন উন্দুলুস শহরের একজন প্রখ্যাত মুহাদ্দিস। ইলমে হাদিসের জগতে তার সুখ্যাতি সর্বজনবিদিত। তিনি একাধারে উচ্চ পর্যায়ের হাদিস বিশারদ, শীর্ষস্থানীয় আবেদ, দুনিয়াবিমুখি ও মুসতাজাবুদ্দাওয়াত (যার দোয়া কবুল হয়) ছিলেন একবার জনৈক নারী তাকে বলল, আমার ছেলেকে ইংরেজরা বন্দী করে রেখেছে। তার চিন্তায় আমার রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। আমার ছোট্ট একটি কুড়েঘর আছে। আমি ঘরটি বিক্রি করে ছেলের মুক্তিপণ


যোগাড় করে তাকে মুক্ত করব। আপনি একজন গ্রাহক খুঁজে দিন। আমি অস্থির এবং ব্যাকুল হয়ে পড়েছি। হজরত বাকি ইবনে মুখাল্লাদ রহ. সস্তানহারা হতভাগা মায়ের আর্তনাদ শুনে তাকে বললেন- তুমি এখন যাও, আমি তোমার বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করবো। একথা বলেই তিনি মাথা নিচু করলেন এবং ছেলেটির মুক্তির জন্যে দোয়া করতে লাগলেন। এ ঘটনার মাত্র কয়েকদিন পরই সেই নারী আবার ফিরে এলো, এবার সঙ্গে ছিল তার সদ্য কারামুক্ত ছেলে।


এসে বলল, এর কাছে শুনুন, কী অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে। হজরত বাকি ইবনে মুখাল্লাদ রহ., জিজ্ঞাসা করলেন, বলো, কী ঘটনা ঘটেছে?


ছেলেটি বলতে লাগল, আমাকে ইংরেজরা সেসব কয়েদিদের সাথে অন্তর্ভুক্ত করল, যারা শৃংখল অবস্থায় সম্রাটের সেবাদাস হিসেবে নিয়োজিত থাকে। একদিন আমি আমার অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছিলাম। আচমকা চলার পথেই আমার পা হতে শিকল খুলে মাটিতে পড়ে গেল। আমার পাহারায় নিয়োজিত সিপাহী গালমন্দ করে বলল, পায়ের শিকল খুললে কেনো? আমি বললাম, খোদার কসম! আমি টেরও পাই নি, কখন কীভাবে আমার পা হতে শিকল খুলে পড়ে গেছে।


 তারপর সে একজন কর্মকারকে ডেকে এনে পুনরায় আমার পায়ে শিকলটি পরিয়ে দিল। এবার অত্যন্ত মজবুত পেরেক এঁটে দেওয়া হলো আমার শিকলে। কিন্তু পরক্ষণে উঠে হাঁটতে শুরু করলাম, আর সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় আমার পা হতে শিকল খুলে পড়ে গেল। সিপাহী পুনরায় সেটাকে পরিয়ে দিলো কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবারও শিকল খুলে পড়ে গেল।


এতে সকল সিপাহীরা অবাক ও বিস্মিত হলো। তাদের পাদ্রীর নিকট এর রহস্য জানতে চাইলে তারা বলল, ছেলেটির মা জীবিত আছে? আমিই উত্তর দিয়ে বললাম, হ্যা! পাদ্রীরা বলল, মনে হচ্ছে তার মা তার জন্য দোয়া করেছে, আর তার দোয়া মঞ্জুর হয়ে গেছে।


অতঃপর পাদ্রীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাকে ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিলো। পরামর্শ মতো তারা আমাকে মুক্ত করে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে আমি মুসলিম নগরীতে চলে এলাম। হজরত বাকি ইবনে মুখাল্লাদ রহ. শিকল খুলে পড়ে যাওয়ার মুহূর্তটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন, দেখা গেল মুহূর্তটি ঠিক তখনই ছিল যখন তিনি তার জন্যে আল্লাহর দরবারে দোয়া করছিলেন।